বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট গণজোয়ারের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর চাপ বাড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে নিরাপদ আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েন। দলের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা না আসায় অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যান, আবার অনেকে দেশ ছাড়েন।
৫ আগস্টের পরপরই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম এবং আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অনেকেই দেশ ত্যাগ করেন।
তবে তখন একটি বড় প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন? তিনি দেশে আছেন না বিদেশে, এই প্রশ্নটি রাজনৈতিক মহলে ছিল। সময়ের সাথে সাথে তার সম্পর্কে নানা গুজব ছড়িয়েছে।
গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাস ৫ দিন তিনি দেশে ছিলেন এবং সে সময়ে তিনি নিরাপদে ছিলেন। দলের সভাপতির মতো তিনিও ভারতে আশ্রয় নেবার চেষ্টা করেন এবং দলের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তবে সাড়া পাননি।
সূত্রের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বিশেষভাবে বিরক্ত ছিলেন। ‘ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ এই বক্তব্যে আন্দোলনে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে বলে দলের নেতারা মনে করেন।
৮ নভেম্বর, ওবায়দুল কাদের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং হয়ে কলকাতায় পৌঁছান। সেখানে তিনি এক বিশেষ স্থানে সময় কাটাচ্ছিলেন, তবে কীভাবে দেশ ছাড়বেন তার পরিকল্পনা করছিলেন।
সবুজ সংকেত পাওয়ার পর তিনি সড়কপথে বিশেষ ব্যবস্থায় কলকাতা পৌঁছান। দিল্লি নয়, কলকাতাতেই অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। ভারত সরকারের কাছে তার জন্য কিছু লোক লবিং করছিলেন, তবে শেখ হাসিনা তাতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
এর আগে, ৯ নভেম্বর, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের আগ্রাবাদ অ্যাক্সেস রোডের এ আর টাওয়ারে একটি বাড়িতে ওবায়দুল কাদের অবস্থান করছেন এমন সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে তাকে না পেয়ে পুলিশ তার স্ত্রীর বড় ভাই নুরুল হুদা বাবুকে (৭০) থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ১০ নভেম্বর সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের।