নিজ ভাই ও বোনের ভুয়া স্বাক্ষর এবং জাল দলিল তৈরি করে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নিজের দখলে নিয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে সিমিন রহমান। এই গ্রুপটি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার-এর মালিক প্রতিষ্ঠান। সিমিন রহমানের এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর আইনি ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হন তাঁর বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান। কিন্তু আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার ১০ দিনের মাথায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। অন্যদিকে ছোট বোন শাযরেহ্ হক নিজের প্রাপ্য বুঝে পেতে এখনও আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে শাযরেহ্ হক গুলশান থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন, যেখানে সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা ও সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে সিমিন রহমান তাঁর প্রভাব খাটিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহকারী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের মাধ্যমে আদালত থেকে নিজের পক্ষে আদেশ নিয়েছেন সিমিন। তৌফিকার চেম্বারের দুই আইনজীবী শাহীন ও বাহারুল এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত ও বিচার প্রভাবিত করতে সিমিন রহমান নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন 'প্রথম আলো' এবং 'ডেইলি স্টার'-কে ব্যবহার করেছেন।
শাযরেহ্ হকের মামলার পর ট্রান্সকমের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন। কিন্তু বিদেশে অবস্থানরত সিমিন রহমান উচ্চ আদালত থেকে নির্বিঘ্নে দেশে ফেরার আদেশ নেন এবং দেশে ফিরে জামিনও পান। মামলার নথিপত্রে দেখা গেছে, সিমিন রহমান নিজের নামে ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার নেওয়ার জন্য ভুয়া পারিবারিক দলিল এবং ভাই-বোনের স্বাক্ষর জাল করেন। এছাড়া গুলশানের ২ বিঘা ২ কাঠা জমির ওপর ভুয়া *হেবা* দলিল তৈরি করে নিজের নামে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। শাযরেহ্ হকের আপত্তির পর রাজউক সেই ভুয়া দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করে।
আইনজীবীরা জানান, লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকেই এই জালিয়াতির সূত্রপাত। সম্প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং ডাক বিভাগের প্রতিবেদনে প্রমাণ মিলেছে যে, ২০২০ সালের দলিল তৈরিতে ২০২৩ সালের মুদ্রিত স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা এই জালিয়াতি দেখে বিস্মিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিমিন রহমান এই ভুয়া দলিলের মূল কপি তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জমা না দিয়ে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করছেন। এ নিয়ে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলেও আদালত তা খারিজ করে দেন। শাযরেহ্ হক সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
অন্যদিকে সিমিন রহমানের আইনজীবী অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।